WB Primary Teachers Update : আমরা সকলে জানি, পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে উঠেছে প্রাথমিক টেট (TET) ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ। গত কয়েক বছরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ দ্বারা পরিচালিত নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে এসেছে, যা শিক্ষা জগতে চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। আজ, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হতে চলেছে।
কী নিয়ে এই মামলা হয়েছিল?
মূল অভিযোগ ঘিরে রয়েছে ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষা ও তার পরবর্তী নিয়োগ প্রক্রিয়া। বহু প্রার্থী অভিযোগ করেছেন যে তাঁরা পরীক্ষায় যোগ দিলেও মেধাতালিকায় নাম পাননি, অথচ পরবর্তীতে অনেকেই নিয়োগ পেয়েছেন যাঁদের নাম তালিকায় ছিল না। মামলাকারীদের তরফে দাবি করা হয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, ওএমআর শিটে কারচুপি হয়েছে, এমনকি ঘুষ দিয়ে চাকরি পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে কী বলা হয়েছিল?
এই মামলার প্রেক্ষিতে আগেই কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ জানিয়ে দিয়েছে, প্রমাণিতভাবে যাঁরা অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের চাকরি বাতিল করতে হবে। এই নির্দেশে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। বহু শিক্ষক এই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেন। আদালতে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরও তাদের পক্ষে সওয়াল করেছে যে, সব নিয়োগে অনিয়ম হয়নি এবং একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা ছাড়া বাকিরা বৈধ প্রক্রিয়াতেই চাকরি পেয়েছেন।
বর্তমানে শুনানির গুরুত্ব
বর্তমানে শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি নির্ধারণ করবে রাজ্যের কয়েক হাজার প্রাথমিক শিক্ষক চাকরি বজায় রাখতে পারবেন কি না। একদিকে আদালত যদি সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বহাল রাখে, তবে বহু শিক্ষককে চাকরি ছাড়তে হতে পারে এবং নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। অন্যদিকে, যদি ডিভিশন বেঞ্চ পূর্ববর্তী রায় খারিজ করে, তবে মামলাটি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। শিক্ষামহল মনে করছে, এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের শিক্ষানীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে দোটানা অবস্থা
মামলার টানাপোড়েনে শুধু শিক্ষকরা নন, প্রভাব পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীদের উপরেও। বহু বিদ্যালয়ে শিক্ষক ঘাটতির ফলে স্বাভাবিক ক্লাস ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষকরা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন—একদিকে চাকরি থাকবে কি না তার টানাপোড়েন, অন্যদিকে শিক্ষাদানের দায়িত্ব। একাধিক বিদ্যালয়ে এই মামলার ফলাফলের দিকে তাকিয়ে রাখা হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে নতুন শিক্ষকদের নিয়োগ দিতে প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
শিক্ষক বাতিল নিয়ে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কী
এই মামলার পেছনে রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। বিরোধী দলগুলি বরাবরই দাবি করে এসেছে যে রাজ্যের তৃণমূল সরকার টেট-নিয়োগে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। যদিও শাসকদলের দাবি, বিরোধীরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিক্ষা দপ্তরের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাইছে। তদন্তে উঠে এসেছে বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নাম, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও চাপানউতোর চলছে।
মাত্র ১৪৯৯ টাকায় পোর্টেবল এসি, গরমের দিনে ঘর হবে বরফ – Low Price Portable AC 2025
শেষ কথা
আজকের ডিভিশন বেঞ্চের শুনানি কেবল আইনগত নয়, সামাজিক ও নৈতিক দিক থেকেও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির এই মামলার রায় প্রভাব ফেলবে হাজার হাজার শিক্ষক ও লাখ লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের উপর। আদালতের রায়ে কতটা স্বচ্ছতা ও ন্যায় বিচার প্রতিফলিত হয়, সেটাই এখন দেখার।